কম্পিউটার ইতিহাস

ভুমিকা
গণনাযন্ত্র, সংগনক বা কম্পিউটার (ইংরেজি: Computer) হল এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।
কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক "কম্পিউট" (compute)শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে। [১] পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আইবিএম (International Business Machines - IBM) কোম্পানির 1620 সিরিজের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)। যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল গবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ। এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কম্পিউটার
ইতিহাস
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার (এনিয়াক)
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়।[২] এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গণনা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গণনা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।
১৬১৭ সালে স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার গণনার কাজে ছাপা বা দাগ কাটাকাটি অথবা দন্ড ব্যবহার করেন। এসব দন্ড জন নেপিয়ার (John Napier) এর অস্থি নামে পরিচিত। ১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। ১৬৭১ সালের জার্মান গণিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ প্যাসকেলের যন্ত্রের ভিত্তিতে চাকা ও দন্ড ব্যবহার করে গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো উন্নত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। তিনি যন্ত্রটির নাম দেন রিকোনিং যন্ত্র (Rechoning Mechine)। পরে ১৮২০ সালে টমাস ডি কোমার রিকোনিং যন্ত্রের পরিমার্জন করে লিবনিজের যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় (১৮৩৩ সালে) তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারণা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার। কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) বা আইটি (IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর।[৩]
ল্যাপটপ কম্পিউটারের ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এম কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। এর পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একই সময় আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট (Apple Computer Inc) তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ (Apple-Macintosh) কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে অ্যাপল তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।
কম্পিউটার সিস্টেম
সিস্টেম হলো কতগুলো ইন্টিগ্রেটেড উপাদানের সম্মিলিত প্রয়াস যা কিছু সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কাজ করে। কম্পিউটার সিস্টেমের উপাদানগুলো নিম্নরূপ :-[৪]
১.হার্ডওয়্যার,
২.সফটওয়্যার,
৩.হিউম্যানওয়্যার বা ব্যবহারকারী,
৪.ডেটা বা ইনফরমেশন।
হার্ডওয়্যার
কম্পিউটারের বাহ্যিক আকৃতিসম্পন্ন সকল যন্ত্র, যন্ত্রাংশ ও ডিভাইস সমূহকে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে প্রাথমিকভাবে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
ইনপুট যন্ত্রপাতি
১.কী-বোর্ড
২.মাউস
৩.ডিস্ক
৪.স্ক্যানার
৫.কার্ড রিডার,
৭.ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি।
সিস্টেম ইউনিট
হার্ড ডিস্ক
মাদারবোর্ড
এজিপি কার্ড
র্যাম ইত্যাদি।
আউটপুট যন্ত্রপাতি
মনিটর
প্রিন্টার
ডিস্ক
স্পিকার
প্রোজেক্টর
হেড ফোন ইত্যাদি।
অপারেটিং সিস্টেম
ডস
উইন্ডোজ ৯৫
উইন্ডোজ ৯৮
উইন্ডোজ ২০০০
ইউনিক্স, উবুন্টু
মিন্ট (অপারেটিং সিস্টেম)
ডেবিয়ান
ফেডোরা
ম্যাক ওএসএক্স
উইন্ডোজ এক্সপি
উইন্ডোজ ভিস্তা
উইন্ডোজ ৭
উইন্ডোজ ৮
উইন্ডোজ ৮.১
উইন্ডোজ ১০
উইন্ডোজ ১১
লিনাক্স
প্রধান প্রকারভেদ
সফটওয়্যার প্রধানত ৩ প্রকারঃ-
১. সিস্টেম সফটওয়্যার
২. প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার
৩. এপ্লিকেশন সফটওয়্যার
সিস্টেম সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার চালনা করতে সহায়তা করে, এপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালানোর জন্য প্লাটফর্ম গঠন করে। সিস্টেম সফটওয়্যারের মধ্যে আছে অপারেটিং সিস্টেম, হার্ডওয়্যার ড্রাইভার ইত্যাদি।
আধুনিক মানব সভ্যতার সময়ের উপযোগী আবিষ্কার হল কম্পিউটার। কম্পিউটার সকল কাজকে করেছে অতি সহজতর। জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে কম্পিউটার এর প্রয়োজন নাই। কম্পিউটার মানবজীবনের সকল কাজ কে গতিময় ও সময় উপযোগী সকল দিক নির্দেশনা দিয়েছে। কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা সব কিছুতে,সৃজনশীলতা ও সহজলভ্য দিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে,যা এ শতাব্দী তে জীবনযাত্রা কে করছে অনেক সৃষ্টিশীল ও সহজতর। আপনি যদি স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে থাকেন তবে কম্পিউটার এর বেসিক সকল তথ্য জানতে এই পোস্টটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।
কম্পিউটার কি
ল্যাটিন কম্পুটেয়ার শব্দ থেকে ইংরেজি কম্পিউটার শব্দের উদ্ভব। যার বাংলা আভিধানিক অর্থ মূলত হিসাব বা গণনাকারী যন্ত্র। কম্পিউটার হলো এমন এক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যা বৈদ্যুতিক লাইনের উপস্থিতিতে ব্যবহারকারীর দেওয়া সকল তথ্য /ডাটা (Data) ও নির্দেশনার (instruction) উপর ভিত্তি করে, প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে অতি দ্রুত ফলাফল বা (Output)আউটপুট প্রদান করে। কম্পিউটার মূলত এর ব্যবহারকারীর দেওয়া সকল ডাটা ও নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে সকল কাজ করে থাকে।
কম্পিউটারের ইতিহাস
আমরা সবাই অত্যাধুনিক যুগের অধিবাসী। এ যুগের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় যন্ত্র কম্পিউটার আধুনিক রূপ কিন্তু একদিনে পায়নি। এর জন্য অনেক সময় ধরে বিশেষজ্ঞদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কম্পিউটার নামের এই যন্ত্রটি কোথা থেকে এলো এবং কিভাবে এলো তা জানার আগ্রহ নিশ্চয়ই প্রত্যেক মানুষের রয়েছে, এবং এটার সম্পর্কৃত বিষয়গুলি জানা অত্যন্ত জরুরী।
কম্পিউটারের আবিষ্কারক কে বা কম্পিউটারের জনক কে?
কম্পিউটার এর আবিষ্কার নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। বেশির ভাগ মানুষ বলেন চার্লস ব্যাবেজকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তবে তিনি আধুনিক কম্পিউটার তৈরীর করার জন্য অ্যানালিটিকেল ইঞ্জিন তৈরী করেন। কিন্তু তিনি কম্পিউটার আবিষ্কার কাজটি সম্পন্ন করে যেতে পারেনি। তার পরে স্যার জর্জ হাওয়ার্ড আইকন চার্লস ব্যাবেজ এর অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন ব্যবহার করে প্রথম ইলেক্ট্রিকেল কম্পিউটার MARK-1 তৈরী করেন। এজন্য আইকেন কে প্রথম ইলেক্ট্রিকেল কম্পিউটারের আবিষ্কারক বলা হয়ে থাকে এবং চার্লস ব্যাবেজকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কম্পিউটার এর সূচনা
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু হয় মূলত ষাটের দশকে এবং নব্বই-এর দশকে তার ব্যাপকতা লাভ করে। ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আইবিএম (International Business Machines – IBM) কোম্পানির 1620 সিরিজের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)। যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল গবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ। ষাটের দশকের শেষ দিকে তৎকালীন হাবিব ব্যাংক IBM 1401 কম্পিউটার এবং ইউনাইটেড ব্যাংক IBM 1901 কম্পিউটার স্থাপন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে কম্পিউটার এর ব্যবহার এর সূচনা করে।
১৯৭২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ধাপে ধাপে স্থাপন করে IBM 370, IBM 9100 এবং IBM 4341 নামক বৃহৎ কম্পিউটার
।